কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
প্রিয় পাঠক , আপনি হয়তো কাজু বাদাম খেয়ে থাকেন কিন্তু কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানেন না। কাজু বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান - হ্যাঁ, আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন । আজকের ব্লগপোস্টে আমি আপনাদের জানাবো কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা, কাজুবাদাম দাম, কাজুবাদামের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ।
কাজুবাদাম সম্পর্কিত আপনার সকল প্রশ্নের উত্তর পেতে অবশ্যই পোস্টটি শেষ পর্যন্ত পড়বেন । প্রথমে জেনে নেওয়া যাক - কাজু বাদাম সম্পর্কে
কাজু বাদাম
কাজু বাদাম হলো একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর বাদাম বা বীজ। বাড়িতে উৎসব বা মেহমান অ্যাপায়নে মিষ্টি জাতীয় খাবার হিসেবে (যেমনঃ পায়েস, সেমাই ইত্যাদি ) অনেকই সেমাই বা পায়েসে বাদাম ব্যবহার করে। কাজু বাদাম এই খাবারের স্বাদ আরো বাড়িয়ে দেয়।
কাজু বাদামের দাম
কাজু বাদাম উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
আপনারা অনেকেই হয়তো এমন আছেন যারা কাজুবাদাম খান বা খাবেন কিন্তু কাজু বাদাম খাওয়ার সঠিক নিয়ম সম্পর্কে জানেন না। চলুন জেনে নেওয়া যাক -
কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়মঃ
কাজু বাদাম প্রথম অবস্থায় উপরের খোসা ছাড়িয়ে ভিতরের শাঁস অংশ বের করতে হবে । কাজু বাদাম কাঁচা অবস্থায় না খেয়ে রোদের মধ্যে ভালোভাবে শুকিয়ে লবন পানিতে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখতে হয়। তবে আমরা বাজার থেকে যে কাজু বাদাম কিনে থাকি তা সব সময় লবন যুক্ত পাওয়া যায়। কাজু বাদাম ভাজার পর চিনির রসের মধ্যে ডুবিয়ে রাখলে বেশি মিষ্টি হয়। প্রতিদিন সকালে উঠে খালি পেটে কাজুবাদাম খেতে পারেন বা খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন।
কাজু বাদামের উপকারিতা
শারীরিক উপকারিতায় কাজুবাদামের কোনো বিকল্প হয় না।কাজুবাদামে ভিটামিনের মাত্রা এত বেশি থাকে যে চিকিৎসকরা একে প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট নামেও ডেকে থাকেন।
কাজুবাদামে থাকা ফসফরাস, ভিটামিন-ই ও বি, ফলিক এসিড হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কাজুবাদামে ওলিসিক এসিড নামে একধরনের মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড আছে, যা খারাপ কোলেস্টেরল অর্থাৎ এলডিএল ও ট্রাইগিসারাইডকে কমিয়ে দেয়। হৃদরোগ, স্ট্রোকসহ হার্ট অ্যাটাক রোগ থেকে রক্ষা করে।
কাজুবাদামের ক্যালসিয়াম, কপার, জিংক এবং ম্যাগনেসিয়াম হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে। ফসফরাস দাঁতের বৃদ্ধি ঘটায়। দাঁতকে শক্ত করে ও সুন্দর করে। হাড় এবং দাঁতের গঠনে সাহায্য করে। বয়স্ক লোকের অস্টিওআর্থ্রাইটিসের মতো হাড়ের রোগ প্রতিরোধে কাজুবাদাম বেশ কার্যকর। কপার ও ক্যালসিয়াম অস্টিওপরোসিস রোগ কমায়।
কাজুবাদামে থাকা প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট- যা ক্যান্সার সেলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে কম সোডিয়াম এবং বেশি পরিমাণে থাকা ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া কাজুবাদাম ইউরিক অ্যাসিড তৈরি বন্ধ করার ফলে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
কাজুবাদাম এ থাকা ম্যাগনেসিয়াম স্নায়ু ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ব্রেনের শক্তি বৃদ্ধি পেলে বুদ্ধি, স্মৃতি শক্তি এবং মনোযোগ বাড়ে। কাজুবাদামের উপকারী ফ্যাটি এসিড ব্রেনের শক্তি বাড়ায় এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে। এটি শরীরের শর্করা এবং চর্বি বিপাকে সহায়তা করে। কাজুবাদামের ম্যাগনেসিয়াম ইনসুলিনের মাত্রা এবং কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়, যাতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ হয়।
কাজুবাদাম এর প্রোটিন, কপার, জিংক এবং সেলিনিয়াম চুলের ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর পাশাপাশি চুলের গোড়াকে শক্ত করে। কাজুবাদামের ভিটামিন-সি, কপার, কোলাজেন, ইলাসটিন, জিংক, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং সেলেনিয়াম ত্বকের রঙ বাড়ায় এবং ত্বক ফাটা রোধ করে।
মানবদেহের ওজনের ভারসাম্য রক্ষা করতে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন দৈনিক ৪ থেকে ৫টি কাজুবাদাম খাওয়া উত্তম। কাজুবাদাম খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করে। নিয়মিত কাজুবাদাম খেলে চোখ বেশ সবল থাকে এবং ক্ষতিকর বিকরিত রশ্মি থেকে চোখকে রক্ষা করার ক্ষমতা অর্জন করে।
কাজুবাদাম এর জিংক ও এন্টিঅক্সিডেন্ট ভাইরাসের আক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করে। কাজু বাদামে প্রচুর ভিটামিন থাকে, যা ব্যাকটেরিয়া গঠিত মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এভাবে মানব শরীর সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করে।
কাজু বাদামের ক্ষতিকর দিক
যেহেতু কাজুবাদাম এর পুষ্টিগুনের জন্য বা হালকা নাস্তা হিসেবে আমরা অনেকেই কাজুবাদাম খেয়ে থাকি।কিন্তু আপনার জেনে রাখা আবশ্যক যে অতিরিক্ত পরিমাণে কাজু বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে কাজু খাওয়া এড়িয়ে চলা উচিত।
এতক্ষণ আমরা আলোচনা করেছি কাজু বাদাম খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা নিয়ে, এখন জানব কাজু বাদামের ক্ষতিকর দিক ও অতিরিক্ত পরিমাণে কাজু বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের কি কি ক্ষতি হতে পারে -
ফুসফুসের সমস্যা
কাজুবাদামে রয়েছে আয়রন। আয়রনের অত্যধিক মাত্রা কোষের কাজকে প্রভাবিত করে। কোষে আয়রন জমা হয়। অতিরিক্ত আয়রনের ফলে যদি এটি ফুসফুসের কোষে জমা হয়, তাহলে হাঁপানির লক্ষণ দেখা যায়। যার ফলে মানুষের নিঃশ্বাস প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
ডিহাইড্রেশন হতে পারে
কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। বেশি ফাইবারযুক্ত খাবার খাওয়ার পর জল কম পান করলে ডিহাইড্রেশন হতে পারে। এর প্রধান কারণ হল, ফাইবার সঠিকভাবে দ্রবীভূত করার জন্য জল প্রয়োজন। শরীরে ফাইবার বেশি থাকলে তা দেহে উপস্থিত জল শোষণ করে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যাও শুরু হয়।
স্থুলতা বাড়ে
কাজুবাদামে ক্যালরির পরিমাণ অত্যন্ত বেশি হওয়ায় এটি অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে স্থুলতা, রক্তে শর্করার মাত্রায় সমস্যা হতে পারে। তাই ডায়াবেটিস ও থাইরয়েড রোগীদের কাজুবাদাম খাওয়া উচিত নয়। একইসঙ্গে আপনার যদি ইতিমধ্যেই স্থুলতার সমস্যা থেকে থাকে তাহলেও কাজু বাদাম খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
কাজুবাদাম সম্পর্কিত সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন-উত্তর
সকালে খালি পেটে কাজু বাদাম খাওয়ার উপকারিতা কি ?
উত্তরঃ শারীরিক উপকারিতায় কাজুবাদামের কোনো বিকল্প হয় না।কাজুবাদামে ভিটামিনের মাত্রা এত বেশি থাকে যে চিকিৎসকরা একে প্রাকৃতিক ভিটামিন ট্যাবলেট নামেও ডেকে থাকেন।
কাজুবাদাম খাওয়ার নিয়ম ?
উত্তরঃ কাজু বাদাম প্রথম অবস্থায় উপরের খোসা ছাড়িয়ে ভিতরের শাঁস অংশ বের করতে হবে । কাজু বাদাম কাঁচা অবস্থায় না খেয়ে রোদের মধ্যে ভালোভাবে শুকিয়ে লবন পানিতে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখতে হয়। তবে আমরা বাজার থেকে যে কাজু বাদাম কিনে থাকি তা সব সময় লবন যুক্ত পাওয়া যায়।
100 গ্রাম কাজু বাদামের দাম কত?
১ কেজি কাজু বাদামের দাম কত ?
কাজু বাদাম কি ভেজে খেতে হয় ?
উত্তরঃ কাজু বাদাম প্রথম অবস্থায় উপরের খোসা ছাড়িয়ে ভিতরের শাঁস অংশ বের করতে হবে । কাজু বাদাম কাঁচা অবস্থায় না খেয়ে রোদের মধ্যে ভালোভাবে শুকিয়ে লবন পানিতে কিছুক্ষন ভিজিয়ে রাখতে হয়।
শেষ কিছু কথা
আশা করি , আজকের ব্লগ পোস্টটি পড়ার মাধ্যমে আপনি কাজু বাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং কাজু বাদামের ক্ষতিকর দিক গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। প্রতিনিয়ত এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ এবং অজানা তথ্য গুলো সবার আগে পেতে ভিজিট করুন Dorkari Barta.
তথ্যসূত্রঃ কৃষি তথ্য সার্ভিস