কোনো লক্ষণ ছাড়াই মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে যে রোগে
গ্লুকোমা হলো এমন একটি চোখের একটি জটিল রোগ যাতে চোখের স্নায়ু ধীরে ধীরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি কমে যায়।এই রোগে কোনো লক্ষণ ছাড়াই মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে । গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্বের কোনো প্রতিকার নেই, প্রতিরোধই হলো একমাত্র উপায়।
পৃথিবীতে গ্লুকোমাজনিত অন্ধ লোকের সংখ্যা প্রায় ৮ মিলিয়ন। উল্লেখ্য যে এর একটি বিরাট অংশ রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায়। গ্লুকোমা রোগ সম্পর্কে সাধারন মানুষের অজ্ঞতা এবং সচেতনতার অভাবে এই বিরাট জনগোষ্ঠী অন্ধত্বের শিকার হন, যা প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করতে না পারলে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো গ্লুকোমা কী,কেন গ্লুকোমা হয়, গ্লুকোমার লক্ষণ, গ্লুকোমার রোগ কিভাবে বুঝব, গ্লুকোমা রোগের চিকিৎসা ও রোগীর করণীয় সম্পর্কে। তাই আশা করি গ্লুকোমা রোগ হতে নিজেকে সুরক্ষিত ও অন্যদের গ্লুকোমা নিয়ে সচেতন আজকের সম্পূর্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন।
গ্লুকোমা কী?
গ্লুকোমা হচ্ছে চোখের একটি রোগ যেটি চোখের পেছনে থাকা অপটিক স্নায়ুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এই স্নায়ুর কাজ হচ্ছে চোখকে মস্তিস্কের সাথে যুক্ত করা। এর ফলে ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি কমে যায় এবং এক পর্যায়ে রোগী অন্ধত্ব বরণ করে। সব বয়সের মানুষেরই গ্লুকোমা হতে পারে। তবে ৭০-৮০ বছর বয়সীদের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
কেন গ্লুকোমা হয়
এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যখন চোখের তরল ভালোভাবে বের হতে না পেরে চোখের উপর উল্টো প্রেসার বা চাপ সৃষ্টি করে, তখন গ্লুকোমা হয়। এই চাপের কারণে চোখকে মস্তিস্কের সাথে সংযুক্তকারী স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয় যাকে বলা হয় অপটিক নার্ভ
তবে কিছু কিছু রোগের সাথে এই রোগের গভীর সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায় এবং অন্যান্য কারণেও এই রোগ হতে পারে যেমন-
- পারিবারিক -আপনার মা-বাবা বা ভাই-বোনদের মধ্যে বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয়ের গ্লুকোমা থাকলে আপনার ঝুঁকিও অনেক বেড়ে যায়
- ঊর্ধ্ব বয়স (চল্লিশ বা তদুর্ধ্ব)। ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ।
- মাইগ্রেন নামক মাথা ব্যথা।
- রাত্রিকালীন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সেবন।স্টেরোইড নামক ঔষধ দীর্ঘদিন সেবন করা।
- চোখের ছানি অপারেশন না করলে বা দেরি করলে।
- চোখের অন্যান্য রোগের কারণে।
- জন্মগত চোখের ত্রুটি ইত্যাদি।
গ্লুকোমা রোগের লক্ষণ কী?
প্রাথমিক অবস্থায় গ্লুকোমায় কোনো ধরনের উপসর্গ থাকে না। শুধু পরীক্ষার মাধ্যমেই এটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
চশমা পরিবর্তনের সময় কিংবা নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষার সময় হঠাৎ করেই চিকিৎসক এই রোগ নির্ণয় করে থাকেন।
তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিম্নের লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। যেমন-
১। ঘন ঘন চশমার গ্লাস পরিবর্তন হওয়া।
২। চোখে ঝাপসা দেখা বা আলোর চারপাশে রংধনুর মতো দেখা।
৩। ঘন ঘন মাথা ব্যথা বা চোখে ব্যথা হওয়া।
৪। দৃষ্টিশক্তি ধীরে ধীরে কমে আসা বা দৃষ্টির পারিপার্শ্বিক ব্যপ্তি কমে আসা। অনেক সময় চলতে গিয়ে দরজার পাশে বা অন্য কোন পথচারীর গায়ে ধাক্কা লাগা।
৫। মৃদু আলোতে কাজ করলে চোখে ব্যথা অনুভূত হওয়া।
৬। ছোট ছোট বাচ্চাদের অথবা জন্মের পর চোখের কর্ণিয়া ক্রমাগত বড় হয়ে যাওয়া বা চোখের কর্ণিয়া সাদা হয়ে যাওয়া, চোখ লাল হওয়া, চোখ দিয়ে পানি পড়া ইত্যাদি।
গ্লুকোমা রোগ কিভাবে বুঝব
কোনো লক্ষন না থাকলেও নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করালে গ্লুকোমা রোগ শনাক্ত করা যায়। প্রতি দুই বছর পর পর একবার করে চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।
খুব দ্রুত এবং ব্যথাহীন টেস্টের মাধ্যমে গ্লুকোমা শনাক্ত করা যায়। যেমন দৃষ্টিশক্তির পরীক্ষা কিংবা আপনার চোখের উপর কতটা চাপ পড়ছে তার পরিক্ষা ইত্যাদি।
টেস্টে যদি আপনার গ্লুকোমা শনাক্ত হয় তাহলে দেরি না করে চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
গ্লুকোমার চিকিৎসা
গ্লুকোমার কারণে কেউ অন্ধ হয়ে গেলে তার দৃষ্টিশক্তি আর ফিরিয়ে আনা যায় না। তবে দৃষ্টিশক্তি কিছুটা কমে গেলে চিকিৎসার মাধ্যমে সেটি আর না কমার ব্যবস্থা করা যায়।
আক্রান্তের কী ধরনের চিকিৎসা দরকার তা নির্ভর করে গ্লুকোমার ধরনের উপর। গ্লুকোমার চিকিৎসায় যা ব্যবহার করা তা হলো-
চোখের ড্রপ- এটি চোখের উপর চাপ পড়া কমায়।
লেজার চিকিৎসা- চোখের নিষ্কাশনে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করায় ব্যবহৃত হয়। আবার চোখে তরল যাতে কম উৎপাদিত হয় তাও নিয়ন্ত্রণে লেজার চিকিৎসা করা হয়।
অস্ত্রোপচার- চোখের তরলের নিষ্কাশন বাড়ানোর জন্য এটি করা হয়।
গ্লুকোমায় হারানো দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনা যায় না। বরং চিকিৎসার মাধ্যমে দৃষ্টিশক্তি যাতে আর না হারায় সে ব্যবস্থা করা যায়।
আর তাই, চিকিৎসা চলার সময় চিকিৎসক যে ওষুধ দেন তা নিয়মিত সেবন করতে হবে, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে চিকিৎসককে জানাতে হবে, নিয়মিত চোখের পরীক্ষা করতে হবে। কারো গ্লুকোমা ধরা পড়লে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও এই পরীক্ষা করাতে হবে কারণ তাদেরও এই ঝুকি থাকতে পারে।
আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সাথে কোনো লক্ষণ ছাড়াই মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে যে রোগে অর্থাৎ গ্লুকোমা রোগ নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই নিচে দেওয়া কমেন্টবক্সে জানাতে ভুলবেন না। এইরকম আরো ইনফরমেটিভ পোস্ট পড়তে Dorkari Barta'র সাথেই থাকুন,ধন্যবাদ।