ডিপফেক (DeepFake) থেকে কিভাবে নিজেকে বাঁচাবেন ?

ডিপফেক (DeepFake) : বর্তমান যুগ হলো এআই তথা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ( AI ) এর যুগ। এখন অনেক জটিল ও সময়সাপেক্ষ কাজও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্টের ( AI )  ব্যবহারের মাধ্যমে মুহুর্তের মধ্যে করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। যা হয়তো  কিছু বছর আগেও মানুষের কল্পনার বাইরে ছিলো।


ডিপফেক টেকনোলজি


বর্তমান সময়ে এই  এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা  আমাদের জীবনকে যেমন সহজ করে তুলেছে তেমনি এর রয়েছে কিছু ক্ষতিকর ও ভয়ঙ্কর দিক। তার মধ্যে ডিপফেক  (DeepFake) প্রযুক্তি অন্যতম। 

প্রিয় পাঠক, আজকের আর্টিকেলে আমরা জানবো ডিপফেক (DeepFake)  কি , ডিপফেক (DeepFake) প্রযুক্তি থেকে নিজেকে কিভাবে সুরক্ষিত রাখবেন  এই বিষয়গুলো নিয়ে। চলুন আগে জেনে নেওয়া যাক, ডিপফেক (DeepFake) কি?


ডিপফেক (DeepFake) কি


ডিপফেক (DeepFake) এটি একটি ইংরেজি শব্দ। এই ইংরেজি শব্দটি (DeepFake) দেখেই বোঝা যাচ্ছে  এর অর্থ Deep (গভীর) ও Fake (নকল) অর্থাৎ কোনো কিছুকে গভীরভাবে নকল করা।


ডিপফেক হচ্ছে এমন একটি এআই প্রযুক্তি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যার মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যভাবে ছবি, ভিডিও ও অডিও রেকর্ডিংয়ে কোনো ব্যাক্তির মুখমন্ডল ও ভয়েস বা কণ্ঠস্বর হুবহু নকল করা হয়। এটি এতোটা  নিখুঁতভাবে করা হয় যে প্রায়সময় কোনটি সত্য বা কোনটি মিথ্যা তা বোঝার উপায় থাকে না।


ডিপফেক (DeepFake) থেকে বাঁচার উপায়


দিন দিন এই ডিপফেক প্রযুক্তির অপব্যবহার বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ ও সংবাদ মাধ্যম  গুলোতে  এই ডিপফেক (DeepFake) প্রযুক্তির অপব্যাবহারের নানা ঘটনা আমরা প্রায় দেখে থাকি।


 বিশেষ করে বড় বড় সেলিব্রেটি ও রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গরা এই ডিপফেক প্রযুক্তির ব্যাবহার করে তৈরি নকল ভিডিও বা অডিও এর মাধ্যমে হেনস্তার  শিকার হচ্ছেন। কিছু দুষ্ট চক্র  এই মিথ্যা বা নকল ভিডিওগুলো ছড়িয়ে তাদের সুনাম বা খ্যাতি নষ্ট করার চেষ্টা করে থাকে।

বর্তমানে অনলাইনে হাজার হাজার এই ধরনের ভিডিও ছড়িয়ে আছে। ব্রিটিশ গণমাধ্যম চ্যানেল ফোরের এক বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪ হাজার তারকা ও বিখ্যাত ব্যক্তি ডিপফেক পর্নোগ্রাফির শিকার হচ্ছেন। সাধারণ মানুষও এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। 

প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নতির কারনে এই ডিপফেক ভিডিও,ছবি বা অডিওগুলো শনাক্ত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।তবুও এই ডিপফেক থেকে  রক্ষা পেতে ও নিজের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের সুরক্ষায় আমরা নিচে উল্লেখিত কিছু পদক্ষেপ মেনে চলতে পারি -


১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা পাবলিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে নিজের ছবি ,ভিডিও যতদূর সম্ভব শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন এবং এইসব প্ল্যাটফর্মের প্রাইভেসি সেটিংসগুলো সঠিকভাবে চালু করুন।


২.সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অনলাইন অ্যাকাউন্ট গুলোতে শক্তিশালি পাওয়ার্ড (ছোট বা বড় হাতের অক্ষর ও বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার) ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ড কারো সাথে শেয়ার করা ও কোনো সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।

কোনো সাইটে লগিন করার সময় অবশ্যই সাইট লিংকটি চেক করে দেখবেন । কারন হ্যাকাররা বিভিন্ন জনপ্রিয় সাইটগুলো ক্লোন (হুবহু নকল ) করে আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে,আপনি যখনই ঐ সকল সাইটে আপনার গোপনীয় তথ্য দিয়ে লগিন করবেন তা হ্যাকারদের কাছে চলে যাবে এবং এতে আপনার গোপনীয় তথ্য চুরি হতে পারে। 


৩.আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে ভাইরাস বা ম্যালওয়ার ছড়িয়ে হ্যাকাররা আপনার তথ্য চুরি ও ডিভাইসের একসেস নিয়ে নিতে পারে। এজন্য আপনার কম্পিউটারে ভালোমানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন এবং আনঅফিসিয়াল বা থার্ডপার্টি বিভিন্ন উৎস থেকে যেকোনো ফাইল,অ্যাপস বা সফটওয়্যার ডাউনলোড বা ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন।


৪.ডিপফেক কন্টেন্টগুলো চিনার উপায়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কন্টেন্ট নকল বা ভুয়া মনে হলে এটি শেয়ার বা বিশ্বাস করা থেকে বিরত থাকুন এবং এটি রিপোর্ট করুন।


৫.নিজের ছবি ও ভিডিওতে জলছাপ বা ওয়াটারমার্ক যুক্ত করুন। এসব ওয়াটারমার্ক অনেক সময় সম্পূর্ণ মুছে ফেলা যায় না। আর সম্পূর্ণ মুছে ফেলার সময় ছবি ও ভিডিও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে এসব ছবি ও ভিডিও দিয়ে ডিপফেক তৈরি কঠিন হয়ে পড়ে। জলছাপ বা ওয়াটারমার্ক একটি অতিরিক্ত সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে।


৬. নিজের ফাইলগুলোয় মেটাডেটা সঠিকভাবে এম্বেড করা হয়েছে নাকি তা নিশ্চিত করতে হবে। মেটাডেটা হলো ফাইল সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক তথ্য। যেমন—কে তৈরি করেছে, কবে তৈরি করা হয়, কোথায় তৈরি হয়েছে, কবে এডিট করা হয়েছে, টাইটেল ইত্যাদি। আপনার কোনো মিডিয়া ফাইল ব্যবহার নিয়ে বিরোধ বা দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে এটি মালিকানার প্রমাণ হিসেবে কাজ করতে পারে। 


তবে এসব পদ্ধতি আপনার তথ্যের সুরক্ষা দেবে তার শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।


প্রিয় পাঠক , আজকের ব্লগ পোস্টটিতে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি  ডিপফেক ভিডিও থেকে নিজেকে কিভাবে রক্ষা করবেন তার কিছু উপায় সম্পর্কে। আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে, পোস্টটি আপনার পরিচিতজনদের সাথে শেয়ার করে তাদের ও এই ডিপফেক প্রযুক্তি  নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায়গুলো সম্পর্কে সচেতন করতে পারেন। এইরকম আরো ইনফরমেটিভ পোস্ট পড়তে Dorkari Barta এর সাথেই থাকুন,ধন্যবাদ।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url