হিটস্ট্রোক কী? লক্ষণ, প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়


চলছে এপ্রিল মাস।  আমাদের দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস হলো এই এপ্রিল মাস।  ইতোমধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশেই পারদ তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী  চলমান দাবদাহ আরো কয়েক সপ্তাহ চলতে পারে। এমন গরমে দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে হিটস্ট্রোক হয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে লোকজন। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা  হিটস্ট্রোক কী,হিটস্ট্রোকের লক্ষণ, প্রাথমিক চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়  সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।


হিটস্ট্রোক কী


বাইরের যেকোনো তাপমাত্রায়  আমাদের শরীর স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপমাত্রা প্রায় স্থির রাখতে সক্ষম। কিন্তু যখন অতিরিক্ত গরমে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কাজ করা বন্ধ করে দেয় তখন  ঘাম বন্ধ হয়ে গিয়ে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়তে শুরু করে। আর গরমে শরীরের এই তাপমাত্রার নিয়ন্ত্রণ হারানোর অবস্থাকে  ‘হিট স্ট্রোক’ বলা হয়। 


শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে হিট স্ট্রোক হয়।


হিটস্ট্রোকের লক্ষণ


১. শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে যাওয়া

২. গরমে অচেতন হয়ে যাওয়া

৩. মাথা ঘোরা

৪. তীব্র মাথা ব্যথা

৫. শরীরের ত্বকের রং বদলে যাওয়া। অবশ্য যাদের ত্বক কালো বা বাদামি, তাদের ক্ষেত্রে চামড়ার রং বদল সাধারণত আলদাভাবে ধরা পড়ে না। 

৬. ঘাম কমে যাওয়া

৭. ত্বক গরম ও শুষ্ক হয়ে যাওয়া

৮. শারীরিক দুর্বলতা ও পেশিতে টান অনুভব করা

৯. বমি হওয়া

১০. হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া

১১. শ্বাস কষ্ট বা শ্বাস–প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া

১২. মানসিক বিভ্রম

১৩. খিঁচুনি


হিটস্ট্রোকের প্রাথমিক চিকিৎসা


কারো হিটস্ট্রোক হলে বা অচেতন হয়ে গেলে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যে কাজগুলো করতে হবে তা হলো:


১. হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে নিয়ে যেতে হবে। রোগীর শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় কাপড় খুলে ফেলতে হবে অর্থাৎ যথাসম্ভব হালকা কাপড়ে থাকতে হবে যাতে শরীরে বাতাস চলাচল করতে পারে।


২. রোগীর শরীরে বাতাস করতে হবে। কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে গা মুছে ফেলতে হবে।


৩. শরীরের তাপমাত্রা কমাতে বগল, ঘাড়, পিঠ ও কুচকিতে আইসপ্যাক ব্যবহার করতে হবে।


হিটস্ট্রোক হলে যেকোনো উপায়ে রোগীর শরীরের তাপমাত্রা কমাতে হবে।


৪.পানিতে সারা শরীর ডুবিয়ে রাখা। গ্রামে হলে পুকুরে নেমে শরীর ঠান্ডা করা অথবা শহরে হলে শাওয়ারের নিচে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে শরীর ঠান্ডা করার চেষ্টা করতে হবে।


৫.প্রাথমিক পর্যায়ে হিট স্ট্রোকের মোকাবেলা করার পর দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে।


হিটস্ট্রোক প্রতিরোধের উপায়


হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধের উপায়গুলোও জেনে রাখা উচিত। ফলেএই অত্যধিক গরমে তুলনামূলক সুস্থ থাকা যাবে।

 বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস এবং ইউনিসেফ এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু উপায় অনুসরণের পরামর্শ দেয়। উপায়গুলো হলো :


১. দিনে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি পানি পান করা


২. ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের কাপড় পরিধান করা


৩. দুপুরের সময়টাতে যখন সূর্যের তাপ বেশি, সে সময় খোলা আকাশের নিচে না থাকা


৪. দিনের বেশির ভাগ সময় ছায়ায় বা সম্ভব হলে ঘরে থাকার চেষ্টা করা


৫. তাপ থেকে বাঁচতে ঘরের জানালা দরজার পর্দা নামিয়ে রাখা


৬. অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা


৭. শরীরচর্চার অভ্যাস থাকলে এ সময় হালকা ব্যায়াম করা


৮. ঘরে থাকার সময় সম্ভব হলে তাপ উৎপন্ন হয় এমন
 ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি বন্ধ করে রাখাসঙ্গে সব সময় স্যালাইন রাখা


৯. অতিরিক্ত ঘেমে গেলে স্যালাইন বা ঠান্ডা পানি পান করা


১০. সবশেষে এই সময় যেকোনো উপায়ে শরীরের তাপমাত্রা কম অর্থাৎ শরীর ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করা


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url