তীব্র গরমে সুস্থ থাকার খাদ্যতালিকা
চলছে বাংলাদেশের সবচেয়ে উষ্ণতম এপ্রিল মাস। তীব্র দাবদাহে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। বিশেষ করে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ইতিমধ্যে ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেছে।
তীব্র গরমে শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সঠিক খাবার নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। এই সময়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ, হাইড্রেশন বজায় রাখা এবং শক্তি সরবরাহের জন্য কিছু নির্দিষ্ট খাবার বেশি উপকারী। আবার, কিছু খাবার আছে যেগুলো এই সময়ে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তাই, এমন পরিস্থিতিতে ডায়রিয়ার মতো অসুখ এড়াতে এবং নিজেদেরকে সুস্থ রাখতে আজকের আর্টিকেলে চিকিৎসকদের মতে - তীব্র গরমে কী খাবেন এবং কী খাবেন না অর্থাৎ তীব্র গরমে সুস্থ থাকার খাদ্যতালিকা নিয়ে আলোচনা করব।
তীব্র গরমে কী খাবেন
প্রচুর পানি: গরমে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। তাই হাইড্রেশন বজায় রাখতে গরমে পানি পানের কোনও বিকল্প নেই। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন।
ফল ও শাকসবজি: ফল ও শাকসবজিতে প্রচুর পানি, ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এগুলো শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তরমুজ, পেঁপে, শসা, টমেটো, পালং শাক, লেটুস ইত্যাদি ফল ও শাকসবজি গরমে বেশ উপকারী। এক্ষেত্রে তরমুজ একটি উপকারি ফল।কারণ তরমুজে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পানি থাকে।
টকদই: দই একটি প্রোবায়োটিক খাবার যা হজমশক্তি উন্নত করে এবং শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। পাকস্থলীকে সুস্থ রাখার জন্য গরমে প্রতিদিন এক বা দুই কাপ দই খাওয়া যেতে পারে।
লেবু পানি: গরমের সময় লেবুর শরবত পান করলে তা শরীরের ক্লান্তি দূর করবে। সেক্ষেত্রে একদম সাধারণ পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করা যেতে পারে। তবে যাদের হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ না থাকলে, স্বাদের জন্য সামান্য লবণও ব্যবহার করতে পারেন।
কম মশলা জাতীয় খাবার: মশলা জাতীয় ভারী খাবার খেতে ভালো লাগলেও গরমের সময় কম মশলা জাতীয় খাবারের ওপর জোর দিতে হবে। কারণ এগুলো সহজে হজমযোগ্য।
স্যুপ ও ঝোল: হালকা স্যুপ ও ঝোল গরমে খেতে বেশ আরামদায়ক। এগুলো শরীরকে হাইড্রেট রাখতে এবং পুষ্টি সরবরাহ করতে সাহায্য ক রে।
তীব্র গরমে কী খাবেন না
চর্বিযুক্ত খাবার: চর্বিযুক্ত খাবার হজম করতে বেশি সময় লাগে এবং শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়। তাই গরমে চর্বিযুক্ত খাবার যেমন ফাস্টফুড,মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি,অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার ইত্যাদি এড়িয়ে চলুন।
আইসক্রিম ও কোমল পানীয়: অনেকে মনে করেন, আইসক্রিম ও ঠাণ্ডা বোতলজাত কোমল পানীয় খেলে গরম কম লাগবে। কিন্তু এগুলো খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেজন্যই আইসক্রিম কিংবা কোমল পানীয় খাওয়ার পরপর তৃষ্ণার্ত বোধ করে মানুষ। তাই আইসক্রিম ও কোমল পানীয় যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত।
মিষ্টি খাবার: মিষ্টি খাবার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায় এবং শরীরকে ডিহাইড্রেট করে। তাই গরমে মিষ্টি খাবার যেমন কেক, পেস্ট্রি, কোল্ড ড্রিংক ইত্যাদি কম খাওয়া উচিত।
ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়: ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় যেমন চা, কফি ইত্যাদি শরীরকে ডিহাইড্রেট করে এবং শরীরকে আরো উষ্ণ করে। তাই গরমে যথাসম্ভব এগুলো এড়িয়ে চলুন।
মদ্যপান: মদ্যপান শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায় এবং ডিহাইড্রেশন ঘটায়। তাই গরমে মদ্যপান একেবারেই করা উচিত নয়।
উপসংহার
প্রিয় পাঠক, আশা করি আজকের "তীব্র গরমে সুস্থ থাকার খাদ্যতালিকা" সম্পর্কিত আর্টিকেলটি আপনাদের ভালো লেগেছে। বর্তমানে এই তীব্র গরমে সুস্থ থাকার জন্য সঠিক খাবার নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এসময় প্রচুর পানি, ফল, শাকসবজি, দই, নারকেল পানি ইত্যাদি খাবার খাওয়া উচিত। কেননা এগুলো গরমে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে এবং হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, চর্বিযুক্ত খাবার, মিষ্টি খাবার, ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এবং মদ্যপান গরমে শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই গরমে সুস্থ থাকতে সঠিক খাদ্যতালিকা অনুসরণ করুন এবং সুস্থ থাকুন।
তথ্যসুত্রঃ বিবিসি